বুধবার দুপুরে ফেনী পৌরসভার উত্তর বারাহীপুর ভুইয়া বাড়িতে এই কাণ্ড ঘটানোর পর ওই ব্যক্তি নিজেই থানায় খবর দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত তাহমিনা আক্তারের (২৮) এর দেড় বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।
পুলিশ তার স্বামী ওবায়দুল হক টুটুলকে (৩২) আটক করেছে। টুটুল ওই বাড়ির গোলাম মাওলা ভুঞার ছেলে।
ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজেদুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর টুটুল ৩৩৩ হটলাইনে ফোন করে পুলিশকে তার বাড়িতে যেতে বলেন। তখন ফেনী মডেল থানার ডিউটি অফিসার ওই বাড়িতে যান।
খবর পেয়ে পুলিশ টুটুলের বাড়িতে গিয়ে টুটুলকে আটক করে। একই সাথে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র দা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে বলে জানান তিনি।
নিহতের বোন রেহানা আক্তার জানান, কুমিল্লা জেলার গুনবতীর আকদিয়া গ্রামের সাহাবুদ্দিনের মেয়ে তাহমিনা পাঁচ বছর আগে পালিয়ে টুটুলকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে আর্থিক অসচ্ছলতা নিয়ে তাদের মাঝে প্রায় সময় ঝগড়া লেগে থাকত।
এরইমধ্যে স্বামী টুটুল শ্বশুরবাড়ি থেকে বেশ কয়েক দফা টাকা নেন। এক পর্যায়ে আরো টাকার জন্য চাপ দিলে তাহমিনা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে খেপে গিয়ে বুধবার দুপুরে ফেইসবুক লাইভে এসে টুটুল তার স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
এদিকে, স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার আগমুহূর্তে ভিডিওতে টুটুল সবার কাছে মাফ চান এবং হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি দেন। এছাড়া পারিবারিক অশান্তির জন্য স্ত্রীকে দায়ী করেন টুটুল।
স্ত্রী তার পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল করত বলেও দাবি করেন টুটুল। ভিডিওতে তিনি তার মেয়েটাকে ও ভাই-বোনকে দেখভালের জন্য সবার কাছে অনুরোধ করেন।
নিহত তাহমিনার বাবা সাহাব উদ্দিন বলেন, “আমার মেয়েকে অনেকটা জোর করে বিয়ে করে টুটুল। বিয়ের পর আমার মেয়ে স্বামীসহ চট্টগ্রামে থাকত। গত কয়েক বছর ধরে যৌতুকের জন্য তাহমিনাকে নির্যাতন করত জামাই টুটুল।
আমি কয়েক দফা ধার করে টাকা দিয়েছে টুটুলকে। গত কয়েক দিন আগে ব্যবসার জন্য মেয়ের মাধ্যমে টুটুল ফের ২০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি ধার করে ১০ হাজার টাকা দিই। এরপর বাকি ১০ হাজার টাকার জন্য আমার মেয়েকে নিয়মিত নির্যাতন করত। আজ আমার মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করে।”
টুটুলের চাচাত ভাই জহিরুল ইসলাম জানান, টুটুলের মধ্যে কখনও খারাপ কোনো আচরণ দেখেননি। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকায় কাপড়ের দোকানে চাকরি করতেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপেক্ষিতে ঢাকায় লকডাউন দেওয়া হলে ওবায়দুল হক ফেনীর বাড়িতে চলে আসেন।
“আজ দুপুরে ঘটনার সময় আমরা তার ঘরের পাশের ঘরে থাকলেও এমনটা আঁচ করতে পারিনি।”
ফেনী মডেল থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, পুলিশ প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছে পারিবারিক কলহের জের ধরে এমন ঘটনা ঘটেছে।
“এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।”
পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
Copyright © 2023 বর্ণ টিভি | Design & Developed By: ZamZam Graphics