শুক্রবার মধ্যরাতে আরিফুল ইসলাম যখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই ঘরে ডাকাত পড়ার মতো একদল লোক এসে দরজায় প্রচণ্ড আঘাত করতে থাকে। তারা হুমকি দেয়, দরজা না খুললে ভেঙে ফেলা হবে। এর কিছুক্ষণ পর সত্যি সত্যি দরজা ভেঙে সাত-আটজন ঘরে ঢুকে আরিফুলকে পেটাতে থাকে আর বলে, ‘তুই খুব জ্বালাচ্ছিস।’ স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানের সামনেই তাঁকে মারতে মারতে তারা বাইরে নিয়ে যায়। স্ত্রী বাধা দিলে তাঁকেও ধাক্কা দেয়।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভিন সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে প্রথমে কারাগারে পাঠালেন। এরপর তাঁরই ইঙ্গিতে তিনি জামিন পেয়ে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একজন মানুষকে বাসা থেকে সুস্থ অবস্থায় ধরে নিয়ে গেলেন ডিসির লোকজন। একদিন পরই তিনি কারাগার থেকে বের হলেন মারাত্মক অসুস্থ হয়ে। তাঁর ওপর কী ধরনের নির্যাতন হয়েছে, অনুমান করা কঠিন নয়। একজন সাংবাদিকের ওপর ডিসি যে এ রকম আক্রোশ ও প্রতিহিংসা দেখাতে পারেন, তা ভাবতেও অবাক লাগে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এটি ডিসির প্রশাসনিক কার্যালয় নয়, টর্চার সেল
কুড়িগ্রাম ডিসির প্রযোজনা ও ডিসি অফিস ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অভিনয়ের এটি ছিল প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় দৃশ্যে দেখানো হয়, আরিফুলের কাছ থেকে তাঁরা ৪৫০ গ্রাম দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছেন। এমন একটি অভিযান তো এখানেই থেমে থাকতে পারে না। পরের দৃশ্যে আমরা দেখতে পাই, কথিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাতেই তাঁকে এক বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কে বলে বাংলাদেশে দ্রুত বিচার পাওয়া যায় না? বিচার দূরের কথা, ডিসিরা চাইলে বাঘ ও মহিষকে এক ঘাটে পানি খাওয়াতে পারেন।
আইন অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত রাতে বসতে পারেন না। কিন্তু জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা আরিফুলকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, তিনি কেন জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। কুড়িগ্রামের পানিতে কুমির আছে কি না জানি না, তবে স্থলভাগে যে কুমির আছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল মধ্যরাতে বেআইনি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানোয়।
আরিফুলের ওপর ডিসির আক্রোশের কারণ গত বছরের ১৯ মে ‘“কাবিখা”র টাকায় পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে নামকরণ’ শিরোনামে তিনি বাংলা ট্রিবিউনে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। সংবাদটি ভুল হলে ডিসি প্রতিবাদ জানাতে পারতেন। তা না করে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে ফাঁসিয়ে দিলেন। স্ত্রী ও শিশুসন্তানদের সামনে তাঁকে মারধর করলেন।
সর্বশেষ খবর হলো, যখন আরিফুলকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড়, তখন ডিসি অফিস থেকেই উদ্যোগ নিয়ে তাঁর জামিনের ব্যবস্থা করা হলো। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ডিসিকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রত্যাহার কোনো শাস্তি নয়। ওই ডিসি আরেক জেলায় গিয়ে একইভাবে সাংবাদিকের ওপর অত্যাচার করবেন। তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
Copyright © 2023 বর্ণ টিভি | Design & Developed By: ZamZam Graphics